স্পোর্টস ডেস্ক: বিশ্বকাপেই শচিন টেন্ডুলকারের ওয়ানডেতে করা ৪৯ সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে ৫০টি সেঞ্চুরির মালিক হয়ে গেছেন বিরাট কোহলি। যে রেকর্ডটিকে মনে করা হতো অধরা, কেউ কখনো ভাঙতে পারবেন না, সেই রেকর্ডটিই মাত্র এক যুগেরও কম সময়ের ব্যবধানে ভেঙে দিলেন কোহলি। এখন চর্চা চলছে, শচিনের ১০০ সেঞ্চুরির রেকর্ডটাও টেকে কি না, তা নিয়ে।
কিন্তু ক্রিকেটের বরপূত্র, ক্যারিবীয় তারকা ব্রায়ান চার্লস লারা যে দুটি রেকর্ড গড়ে ইতিহাসের পাতায় সোনালি অক্ষরে নাম লিখে রেখেছেন, সেটি ভাঙা যাবে কি না তা নিয়ে আলাপ নেই। কেউ হয়তো স্বপ্নেও কল্পনা করছে না যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে লারার ৫০১ এবং টেস্টে সর্বোচ্চ ৪০০ রানের রেকর্ডটি কেউ ভাঙতে পারে।
কিন্তু খোদ ব্রায়ান লারা নিজেই এ আলাপটা তুলে দিলেন। শুধু তাই নয়, নিজেই সম্ভাব্য সেই ক্রিকেটারের নাম জানিয়ে দিলেন তিনি, যিনি তার দুটি অমূল্য রত্ন ভেঙে নতুন রত্নের জন্ম দিতে পারবেন। তিনি আর কেউ নন, ভারতীয় ক্রিকেটের নতুন সেনসেশন, শুভমান গিল। লারা মনে করেন, গিলের মধ্যে সেই প্রতিভার ছোঁয়া তিনি দেখতে পেয়েছেন এবং তার হাতেই ৫০১ এবং ৪০০ রানের রেকর্ড ভাঙা সম্ভব।
লারার দুই রেকর্ডের একটার বয়স ২৯ এবং অন্যটার বয়স ১৯। ১৯৯৪ সালে কাউন্টি ক্রিকেটে ওয়ারউইকশায়ারের হয়ে ডারহামের বিপক্ষে ৪২৭ বলে ৫০১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন ব্রায়ান লারা। ৬২টি বাউন্ডারির সঙ্গে ১০টি ছক্কার মার ছিল তার ওই ইনিংসে। উইকেটে ছিলেন ৪৭৪ মিনিট।
২০০৪ সালের এপ্রিলে সেন্ট জন্সে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ৪০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন ব্রায়ান লারা। ৫৮২ বল খেলে ৪৩টি বাউন্ডার এবং ৪টি ছক্কায় এই রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। যে দুটি রেকর্ড এখনও পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেননি।
কলকাতায় এবিপি সংস্থার দুটি অনুষ্ঠানে আসলে আনন্দবাজার পত্রিকা তার সাক্ষাৎকার নেয়। সেখানেই তিনি নিজের রেকর্ড ভাঙার বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেলেন। বলে দিলেন, ‘শুভমান গিল। সেই পারবে আমার রেকর্ড দুটি ভেঙে দিতে।’
লারা বিষয়টা নিয়ে ফান করছেন কি না নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন প্রশ্নকর্তা। কিন্তু তিনি সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললেন, ‘শুনুন, শুভমান গিল হচ্ছে নতুন প্রজন্মের সবচেয়ে প্রতিভাবান ব্যাটার। নতুন প্রজন্মের ক্রিকেট শাসন করবে। আমি মনে করি, ক্রিকেটের অনেক বড় বড় রেকর্ড ভেঙে দেবে সে।’
তাই বলে ৫০১ ও ৪০০ রানের রেকর্ডও? এতগুলো বছর পেরিয়ে গেল। ধারেকাছেও তো কেউ আসতে পারছে না। লারা বলেন, ‘শুভমান পারবে। আমি তাই বিশ্বাস করি। সে ভেঙে দেবে আমার রেকর্ড।’
কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে তো শুভমান আহামরি কিছু করতে পারলেন না। ফাইনালেও ছিলেন ব্যর্থ। ভারতকে বিশ্বকাপ জেতাতে পারলেন না। একটা সেঞ্চুরিও নেই। এ নিয়ে জবাব দিতে গিয়ে লারা বলেন, ‘সেঞ্চুরি হয়তো করেনি; কিন্তু ছেলেটা কী সব ইনিংস খেলেছে এরইমধ্যে, সেগুলো দেখুন। টেস্ট, ওয়ানডে-তে ডাবল সেঞ্চুরি রয়েছে। আইপিএলে দুর্ধর্ষ সব ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেছে। নানা ফরম্যাটে অনেক বিশ্বকাপও জেতাবে শুভমন।’
না থেমে তিনি আরও বলেন, ‘তার ব্যাটিং ভঙ্গি আর শটের বাহার আমাকে মুগ্ধ করেছে। নিজের উপরে অগাধ বিশ্বাস। পেসারকে ক্রিজ ছেড়ে হেঁটে বেরিয়ে এসে কেমনভাবে পেটায় দেখেছেন? অবিশ্বাস্য!’
কিন্তু আজকের শুভমান গিল-রা যে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটই খেলেন না! কাউন্টি খেলার সেই ঐতিহ্যও নেই। তাহলে আপনার রেকর্ড ভাঙবেন কী করে? লারার জবাব, ‘আমি বলতে চাইছি, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট বা কাউন্টিতে খেললে শুভমান আমার অপরাজিত ৫০১ ভেঙে দেবে। টেস্টে আমার ৪০০ তো ভেঙে দিতেই পারে।’
প্রশ্ন করা হলো, টেস্ট ক্রিকেটে সেভাবে ব্যক্তিগত বড় স্কোর খুব হচ্ছে না। তারপরও এতটা নিশ্চিত হয়ে কী করে বলছেন? লারা নিজের বক্তব্যে অনড়। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট অনেক পাল্টে গেছে। বিশেষ করে ব্যাটিং। দুনিয়া জুড়ে টি-টোয়েন্টি লিগ, বিশেষ করে আইপিএলের জন্যই এই পরিবর্তন। অনেক দ্রুত রান করছে এখনকার ছেলেরা। তাই বড় রান হতেই থাকবে। শুভমান অনেক বড় স্কোর করবে, মিলিয়ে নেবেন আমার কথা।’
এবার লারাকে প্রশ্ন করা হলো, শচিন টেন্ডুলকারের ১০০ সেঞ্চুরির রেকর্ড কি বিরাট কোহলি ভেঙে দিতে পারবেন? এবার কিছুটা শঙ্কা দেখা গেলো তার চোখে-মুখে। একটু দোটানায়ও ছিলেন। যে কারণে পাল্টা জেনে নিলেন, ‘কোহলির বয়স কত এখন? পঁয়ত্রিশ তো?’
‘হ্যাঁ’ উত্তর পাওয়ার পর চোখ বন্ধ করে কিছু গণনা করে নিলেন। বিড়বিড় করে বললেন, ‘পঁয়ত্রিশ। এখন সেঞ্চুরি সংখ্যা ৮০। মানে আরও ২০টা করতে হবে। বছরে পাঁচটা করে হলেও আরও চার বছর। বিরাট তখন উনচল্লিশ। হবে? কঠিন কাজ। খুব কঠিন কাজ।’
কিন্তু কোহলি যে এত ফিট? কড়া অনুশাসনে বেঁধে রেখেছেন, আপনি নিজেই তো বারবার টাইগার পতৌদি স্মারক বক্তৃতায় বলে এলেন। এমনও বলে এলেন, ছেলে খেলাধুলোয় আসতে চাইলে বলবেন, কোহলির প্রস্তুতি আর অনুশাসনকে উদাহরণ করো। তাহলে? লারার পর্যবেক্ষণ, ‘পারতে পারে, যেহেতু লোকটার নাম বিরাট কোহলি। ওর শৃঙ্খলা আর অধ্যবসায়ের খুব বড় ফ্যান আমি। যেভাবে নিজেকে নিংড়ে দিয়ে ও তৈরি হয় ম্যাচের জন্য, সেটা স্রেফ সাধনার পর্যায়ে। ভক্ত না হয়ে উপায় কী!’
সঙ্গে যোগ করলেন, ‘কিন্তু বয়স! জানেন তো বয়স কারও জন্য থেমে থাকে না। কোহলি হয়তো অনেক রেকর্ডই ভেঙে দেবে; কিন্তু একশো সেঞ্চুরির মাইলস্টোন মনে হয় সবচেয়ে কঠিন শৃঙ্গ। সহজ হবে না সেই শৃঙ্গ জয় করে ফেলা।’